হোটেলে ৪ রাত ! নতুন অভিজ্ঞতা ।



আমার পূর্ব পরিচিত কেউ ফিলিপাইনে ছিল না, শুধু মাত্র নিজের জানাশোনা এবং অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছিল ফিলিপাইন আমার জন্য পারফেক্ট ডেসটিনেশন। এক দলাল ধরে ভিসা করেছিলাম সহজেই, মাত্র ২২ হাজার টাকা দিয়ে। আমার পাসপোর্টে ভারত & মালয়েশিয়া ট্যুর ভিসা ছিল। ভারত ভ্রমন করেছি ৩ মাস, কিন্তু মালয়েশিয়া যাওয়া হয় নি এখনও। সহজ ইমিগ্রেশন ফিলিপাইনে। তাই ৩ দিনের হোটেল কনফর্ম বুকিং করে চলে আসলাম।


ফিলিপাইন এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল এর ঠিকানা দেখিয়ে টেক্সি নিলাম। শালা টেক্সি ড্রাইভার ৩০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা নিয়েছিল, বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু কিছু করার ছিল না। হোটেলে পৌছাইলাম! তখন বেলা ২ টা গড়িয়ে বিকেল, হোটেল বয় এসে আমার লাগেজ, ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেল। আমি রিসিপশনে লেখালেখি শেষ করলাম। আমাকে রুমের চাবি & হোটেলের কিছু নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দিল। 
স্মোকিং জোন ব্যাতীত অন্যত্র ধুমপান নিষেধ! মদ খেয়ে মাতলামি করা যাবে না। বাইরে থেকে মেয়ে এনে হোটেলে আকাম করা যাবে না। তবে নির্ধারিত কিছু মেয়ে আছে ওদের কাছে পছন্দ মত পেমেন্ট করলেই সব ঠিকঠাক। আমি ওসবে মাথা না ঘামিয়ে নিজের চিন্তা আর ক্লান্তি নিয়ে রুমে গিয়েই, গোসল সেরে বেড়িয়ে পরলাম। অনেক খুঁজেও দেশি খাবারের কোন গন্ধও পেলাম না। যত্রতত্র ফাস্টফুডের দোকান & দোকানে ভীড় দেখে বুঝে নিলাম উপায় নেই। আমি সব কিছু মানিয়ে নেই, তবে একটু সময় লাগে। ১০০ peso (টাকা) দিয়ে কি ঘোড়ার ডিম খেলাম পেটের তলাও ভরলো না। এক ফলের দোকান পেলাম ফুটপথেই, ৮০ peso প্রতি কেজি দরে কলা, আপেল, আঙুর,মাল্টা কিনে নিলাম কয়েক কেজি। রুমে গিয়ে পেট ভরে ফল খেয়ে। নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে হোটেলের ফ্রি নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পরলাম কাজের খোঁজে। তেমন কোন আশার আলো দেখতে পেলাম না। ফেসবুকে পরিচিত একজনকে পেলাম, তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী ফিলিপাইনে। ৩য় দিনে তার দেখা মিললো। আমার সব কথা শুনে তিনি, পরামর্শ দিলেন। টাকাপয়সা জোগাড় করে ব্যাবসা করো, হেল্প লাগলে করবো। আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে ব্যাবসা করবো ঠিক করে হোটেলে ফিরলাম। আমার সর্বোচ্চ চেস্টা করেও কোন টাকা জোগাড় করতে পারলাম না। আমার হোটেলে ৩ রাত কেটে গেল, সাদা-মাটা ভাবেই। আমার কাছে তখন সাকুল্ল্যে ৪০০ ডলার। বাংলাদেশি উনার সহোযোগিতায় একটা বাসা ভাড়া ঠিক করলাম। নতুন বাসায় উঠতে আরও একদিক হোটেলেই থাকতে হলো।
বাংলাদেশ থেকে ৩ দিনের হোটেল ভাড়া ১২০০০ টাকা দিয়ে এসেছিলাম, বাড়তি ১ দিনে দিতে হলো মাত্র ৭০০peso বুঝলাম দালালের হোটেল বুকিং ব্যাবসা। হোটেলের ৪ দিন আমি নিজেকে বাস্তবতা দেখিয়েছি। ১ জন মাত্র বাংলাদেশী ছাড়া কারো সাথে বাংলায় কথা বলতে পারি নাই। মাঝে মাঝে অসহায় লাগতো! তবে হোটেলে আমার পাশের রুমে থাকা ইউরোপিয়ান এক ৬০ উর্দ্ধ বয়স্ক যুবকের সাথে দীর্ঘ আলাপনে এক সম্পর্ক হয়েছে যা আমার অনেক কষ্ট দূর করে দিয়েছে। আমার কিছুই ছিলনা, কিছুই নেই তবুও হারানোর শঙ্কা দূর হয় না। 
আমার এলোমেলো লেখা! এলোমেলো জীবনে গুছিয়ে লিখলে গেলে গল্প ৯/৬ হয়ে যায়। তাই এলোমেলোই লিখলাম।
আমি জানি আমার চেনাজানা কেউ নেই ব্লগে তাই কিছু কথা শেয়ার করলাম। ধারাবাহিক ভাবে লিখবো. না বলা কথাগুলি। বেলা শেষে আমি ভালোআছি। বাংলাদেশ & মা-বাবা, তোমাদের খুব মিস করি। তোমাদের অভিমানী ছেলে হয়তো আর কোনদিন ফিরবে না। ভালো থেকো তোমরা, শুভ কামনা রইল মা& মাতৃভূমি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা !

ফিলিপাইন ভ্রমন

আমার ভাবনায় বন্ধুত্ব

"জন্মাই আমার আজন্ম পাপ/অভিশাপ"

কর্মজীবীদের চাকরী নিয়ে বিদেশ যেতে করনীয়।

জীবনের জটিলতায় আজ ভবঘুরে আমি !

ধ্রুবতারার প্রেম

মানব মগজ

স্বর্গের মত একটা গ্রাম, রাইন-নরওয়ে

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"