আমার আমি ভাবনা "শূন্য থেকে" আত্ন সমালোচনা ।



আমিই মহান! আমাকে ধারন করার ক্ষমতা আমি ছাড়া আর কারো নেই। আমি ভাবি আমি অতিক্ষুদ্র একটি প্রাণ। আবার আমি ভাবি আমার মাঝে কর্মদক্ষতা নেই, নেই অনেক বেশি জ্ঞান। মাঝে মাঝে ভাবি আমার মাঝে প্রেম, দয়া-মায়াও খুব বেশি নেই। এগুলো সবই আমার ভাবনা, ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না। আর হ্যা, এগুলো সব ভুল ভাবনা (হয়তো) আমি বলছিনা এগুলো মিথ্যা ভাবনা, আমি বলতে চাচ্ছি এগুলো সত্য ভাবনা নয়। এই ভাবনা গুলো অসত্য এইজন্য যে, এগুলো একটাও সঠিক ভাবনা নয়, আর মিথ্যা ভাবনা নয় এই জন্য যে, ভাবনাগুলো আমি নিজেই নিজেকে নিয়ে ভেবে স্থীর করেছি। 

একটু সহজ করে বলি, ধরুন আমি মজা করে আমার স্ত্রীকে বলেছি যে "আগামী মাসে আমি তোমাকে একটা স্বর্ণের হার কিনে দিব"। অথচ কথাটা সত্য নয়, কারন আমার এরূপ ইচ্ছা ও সামর্থ কোনোটাই নাই, শুধু মজা করেই বলেছি। কিন্তু আমার স্ত্রী এটাকে সত্যভেবে প্রতি মাসেই আমাকে খুব ভালবেসে আহ্লাদী কন্ঠে বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে থাকল। এভাবে আমি হঠাৎ ব্যপারটা নিয়ে সিরিয়াস হয়ে উঠলাম এবং স্ত্রীকে দেওয়া কথাটা রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে একবছরের মধ্যে হার কেনার টাকাটা জমিয়ে ফেললাম এবং স্ত্রীকে হার কিনে দিয়ে আমার সেই মজা করে বলা অসত্য কথাটাকে সত্যে রূপান্তর করলাম। এক্ষেত্রে আমার সেই কথাটা সত্য না হলেও এখন আর মিথ্যা নেই, কারন আমি তা করে দেখিয়েছি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এটা সত্য যে আমার কথাটা তখন অসত্য ছিল। কিন্তু অসত্য ছিল শুধুই আমার ভাবনার জন্য, আমি ভেবেছিলাম আমি পারবো না তাই। কিন্তু আমি আজ তা করে দেখিয়েছি এবং নিজেই নিজের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছি। 


আমি নিজেকে যা-ই ভাবি না কেন, তাতে দোষের তেমন কিছুই নেই। শুধু কর্ম করা যাই। নিজেকে মহান করার চেষ্টা করি, গভীরভাবে ধ্যানে ডুব দিই আমার ভিতর হতে ভিতরে, জ্ঞান আমাকে ধরা দিতে বাধ্য । ভালবাসি সবাইকে, মায়া, প্রেম বিলিয়ে দিতেই থাকি । হঠাৎ ভাবনায় আমি প্রেমিক, দয়াবান হয়ে গেলাম। হঠাৎ আমি নিজেকে নিয়ে অন্যরকম ভাবে ভাবতে শুরু করলাম আর দিন দিন সেদিকেই অগ্রসর হতে থাকলাম। একদিন আমার ভিতরের ভাবনা বাইরে সকলের কাছে সত্য হিসেবে প্রকাশ পাবেই। 
আমার ভাবনাই আমাকে সুখে ও দুঃখে রাখছে। আমি নিজেকে সুখী ভাবছি না বলেই আমি দুঃখী। আমি সব বিষয়েই সিরিয়াস হয়ে ভিন্ন ভাবনা ভাবছি। কোনো কিছু নিয়েই খুব সিরিয়াসভাবে ভাবি না। সেটা যেমন বিষয়ই হোক। আমি সিরিয়াস হতে চাই, খুব বেশি সিরিয়াস হতে চাই না। আমাকে কেউ কষ্ট দিতে চাইলে আমি সেটা নিয়ে দুঃখী শুধু আমার ভাবনার কারনে। কেউ কাউকে গালি দিলে আমার কিছু হয় না, তবুও আমার মন খারাপ হয় নানা ধরনের বাজে ভাবনার কারনে। জীবনকে খুব বেশি সিরিয়াসভাবে নেওয়ার কারনেই হয়ত আমি দুঃশ্চিন্তা করি। 


পাগলের সুখ-দুঃখ কোনোটাই নাই। এমনটা নয় একটি পাগল খুব সুখী, সে মোটেও সুখী নয়। কিন্তু আমার মত সে দুঃখীও নয়। কারন সে জীবন নিয়ে সিরিয়াসভাবে ভাবেনা। আজ দুপুরে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাবার সাথে সাথেই আমি ভাবছি আগামীকাল আমি কি খাবো, শুধু কি সেটা! আমি আজ রাতে কি খাবো সেটা ভেবেও ব্যস্ত আমি। অথচ রাতে ও আগামীকাল আমি যে খাবারের অভাবে অনাহারে থাকবো না এটা কি আমি নিশ্চিত? কারন আমার অনেক আছে, আমি অভাবী নই। তবুও আমার ভাবনার কারনে আমি একটি পাখির চেয়েও চিন্তিত, যে পাখি কিনা আজ আহার করে এসে বাসায় ফিরে জানেনা আগামীকাল সে কি খাবে। অথচ আমি নিশ্চিত আমি খাবার পাবো তবুও আমি কী কী খাবার খাবো তা নিয়ে ব্যস্ত। অপরদিকে আরেকজন অভাবীও ভাবছেন আগামীকাল সে কি খাবার পাবে! আমার ভাবনাও সেই অভাবীর মত। তাই আমি আমার ভাবনার কারনে অভাবী না হয়েও ঐ অভাবী ব্যক্তির মতই মানসিকভাবে অসুখী হয়ে পড়ছি । 


আমি হঠাৎ একজন সাধু যোগীকে দেখে ভাবছি সে অনেক বড় একজন সাধক, আমি তার মত হতে পারবো না। অথচ হতে পারে সে সাধনা কেবল শুরু করেছে, আমি যা ভাবছি তা মোটেও সত্য নয়। আমি যদি সাধনায় বসতাম তবে যেটুকু হোক প্রাপ্তিটা আমার হত। আমি সাধক হতে পারতাম যদি আমি ভাবতাম আমি সাধক হতে সক্ষম। আমি ভাবছি সাধু হতে গেলে অনেকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে, কিন্তু আমি নিজেই দেখছি একজন সাধককে মানুষ কতটা মূল্যায়ন করে। কিন্তু আমার এই ভাবনাটার কারনে আমি নিজের বেলায় তা ভেবে উল্টো ভাবছি এবং নিজেকে অক্ষম মনে করছি। আমি ভাবছিলাম যারা অনেক বড় সাধক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারা অনেক যুগ যুগ সাধনা করেছেন যা আমার পক্ষে করা সম্ভব না। অথচ আমি যদি ভাবতাম "তারা ত যুগ যুগ সাধনা করেছে, আমি ত কয়েকটা দিন চেষ্টা করে দেখতে পারি"। কিন্তু আমি তা না ভেবে ভুল ভাবনা নিয়েই রয়েছি। তাই আমার পক্ষে সাধক হওয়া ত দূরের কথা, আম সাধনা শুরুই করতে পারেন নি আজও।

"আমি সম্পূর্ণই আমার নিজের ভাবনার মত। তাই ভাবনার পরিবর্তনেই আমার পরিবর্তন ঘটবে।"

প্রতিটি মানুষের মাঝে যে 'আমিত্ব' আছে, সেটাই হল প্রকৃত শয়তান। দেহের বাইরে শয়তানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে কোনো শয়তান আমাদের ধোকা দিচ্ছে না। আমাদের মাঝে যে 'আমিত্ব" আছে, এই আমিত্ব নামক শয়তানটাই 'আমি'কে অপবিত্র করে দিচ্ছে। 'আমি' প্রভুর নূর, আর 'আমিত্ব' হল শয়তান। 'আমিত্ব' বাদ না দিতে পারলে 'আমি' কখনো পরিশুদ্ধ হয়ে মাওলার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে পারবে না। আমিত্ব যতদিন থাকবে, ততদিনই জন্ম-মৃত্যুর বেরা-জালে আবদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে বার বার আসতে হবে মানবকূল থেকে শুরু করে পশুকূলে। আর একবার পশুকূলে চলে গেলে পৃথিবীর বুকে লক্ষ কোটী পশু যোনী ভ্রমন করতে হবে। 
'আমি' ও 'আমিত্ব' দুটি পৃথক বস্তু। এই দেহের মাঝে এই দুইয়ের বসবাস। এই দেহ থেকে 'আমিত্ব'কে সরিয়ে দিতে না পারলে কখনো প্রভুর দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। 'আমিত্ব' হল অন্ধকার, আর প্রভুর নূর হল আলোর ন্যায় উজ্জ্বল। অন্ধকার আর আলো একসাথে থাকতে পারেনা। তাই যেখানে প্রভুর নূর আছে, সেখানে 'আমিত্ব' থাকতে পারেনা, আর 'আমিত্ব' থাকলে সেখানে প্রভুর নূর প্রকাশ পায় না। এই ধরনীর বুকে যত ওলী-আল্লাহ ছিলেন, যারা এখনও আছেন, এবং যারা আসবেন তারা সবাই আমিত্বকে বিসর্জন দিয়েই আল্লাহকে লাভ করেছেন এবং করবেন। 'আমিত্ব' নামক শয়তানের বন্ধু হয়ে কখনো আল্লাহকে বন্ধু রূপে পাওয়া সম্ভব না। 
মানুষের সামান্য কথায় আমরা আমাদের ক্রোধকে দমিয়ে রাখতে পারিনা, কারো দেওয়া অল্প আঘাত আমরা সহ্য করতে না পেরে পাল্টা আঘাত করি, নিজের সন্তান ও পরিবারের বেলায় হাজার লক্ষ খরচ করতেও দ্বিধা করিনা; কিন্তু অন্যের বেলায় দু'পয়সা দান করতে গেলে হাত খাটো হয়ে আসে। এসবই হচ্ছে 'আমিত্ব' এর কারনে। 'আমি' এতো খারাপ নয়, 'আমি'কে খারাপ পথে পরিচালিত করছে আমার মধ্যে থাকা 'আমিত্ব'।
যখন কারো মন্দ কথা আমাদের গায়ে লাগবে না, কেউ বদনাম করলে কষ্ট পাবোনা, কারো মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমাদের আনন্দ জাগবে না, তখনই 'আমিত্ব' ভাব দূর হয়েছে বুঝতে হবে। তখনই ফানাফিশ শায়েখ পার হয়ে ফানাফির রাসূলে পৌছে যাবে একজন মানুষ।


ছবির মহা-মানবদের জিবনী থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে লেখা। আমার একান্ত ভাবনা মাত্র, ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমা করবেন। JR Sikder

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা !

ফিলিপাইন ভ্রমন

আমার ভাবনায় বন্ধুত্ব

"জন্মাই আমার আজন্ম পাপ/অভিশাপ"

কর্মজীবীদের চাকরী নিয়ে বিদেশ যেতে করনীয়।

জীবনের জটিলতায় আজ ভবঘুরে আমি !

ধ্রুবতারার প্রেম

মানব মগজ

স্বর্গের মত একটা গ্রাম, রাইন-নরওয়ে

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"