ভালোবাসার প্রান !

শুরুতেই সবাইকে অক্সিটসিন, ভেসোপ্রেসিন ও ডোপামিনময় ভালবাসা।

ভালবাসার সাথে কিভাবে নিউরাল, জেনেটিক বা বায়োক্যামিক্যাল নেটওয়ার্কগুলো যুক্ত মানুষ তা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে। দেখা গেছে জুটিদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক মানুষ ব্যতিত অন্য স্তন্যপায়ীদের মধ্যে বিরল। যদিও অধিকাংশ প্রাণীর মধ্যে পারিবারিক বা সামাজিক বন্ধন দেখা যায়। উদাহরনস্বরূপ মাতৃস্নেহ হচ্ছে ভালবাসার অনন্য উদাহরণ। দেখা যায় যে, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এই ভালবাসার প্রক্রিয়া বা ধরন বিবর্তনের গতির সাথে তেমন পরিবর্তন হয়নি; প্রায় একই রকম রয়ে গেছে এই শক্তিশালী প্রক্রিয়াটি।

অক্সিটসিনকে বলা হয় “ভালবাসার হরমোন”। অক্সিটসিন মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে উৎপন্ন হয়ে পিটুইটারি গ্রন্থিতে জমা থাকে। সন্তানের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের সময় দেখা যায় মায়েদের মস্তিষ্কে অক্সিটসিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অক্সিটসিন শুধুমাত্র সন্তানের প্রতি ভালবাসা নয়, বরং সঙ্গী নির্বাচন বা সন্তান উৎপাদনে ভালবাসার কার্যকলাপের সময় অক্সিটসিন অতি মাত্রায় বেড়ে যায়। অক্সিটসিন শুধু ভালবাসার সাথে সম্পর্কিত নয়, তা মানুষে-মানুষে বিশ্বাস ও সামাজিক বন্ধনের সাথেও জড়িত।

অক্সিটসিন reward and reinforcement পদ্ধতিতে কাজ করে, যাকে নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার (মস্তিষ্কের রসায়নিক দ্রব্য যা দুটো নিউরনের মধ্যে সংকেত পাঠিয়ে বার্তাবাহকের কাজ করে)। তাই অক্সিটসিন কোন মাকে বাধ্য করায় তার সন্তানকে ভালবাসতে, আর তার বিনিময়ে মাও পায় তৃপ্তি। মাতৃস্নেহের রসায়ন নিশ্চয় আরো অজানা বিক্রিয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে মানুষ ধীরে ধীরে তার রসায়নকে বোঝার চেষ্টা করছে।

মানুষের মধ্য অক্সিটসিন-ডোপামিন নিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কের অংশগুলোকে খুব সক্রিয় থাকতে দেখা যায় - যখন মা তার সন্তানের ছবি দেখে বা প্রেমিক তার প্রেমিকার ছবি দেখে। বোঝা যাচ্ছে ভালবাসার পেটার্ন আমাদের ব্রেনে হয়তো একই রকম; সেটা মাতৃস্নেহ বা যুগলদের প্রেম যেটাই হোক না কেন।

নারীদের মধ্যে ভালবাসার জন্য অক্সিটসিন দায়ী থাকলেও পুরুষদের মস্তিষ্কের ভালবাসার নিয়ন্ত্রণ হয় ভিন্ন উপায়ে- ভেসোপ্রেসিন হরমোনের মাধ্যমে। এই ভেসোপ্রেসিন পুরুষদের মধ্যে আক্রমনাত্বক মানুষিকতা নিয়ে আসে অন্য পুরুষদের সাথে যুদ্ধ জয় করে সন্তান উৎপাদনের জন্য মহিলা প্রাণীটির সাথে প্রণয় করার জন্য। ভেসোপ্রেসিন পিতৃস্নেহও জাগিয়ে তোলে পুরুষদের মধ্যে।

মানুষের মধ্যে Vasopressin receptor gene, AVPR1A, জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) প্রেম বা দাম্পত্য সম্পর্কের স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিছু পুরুষ যাদের AVPR1A জিনের বিশেষ একটি মিউটেশন রয়েছে তারা সাধারণ পুরুষদের চেয়ে দিগুণ অনাগ্রহী বিয়েতে। আর যদি তারা বিয়ে করেও ফেলে তাদের সাম্প্রতিক দাম্পত্য কলহও দিগুণ পাওয়া গেছে গবেষণায়। এই বিশেষ মিউটেশন বহন করা পুরুষদের স্ত্রীরাও তাদের স্বামীদের বেপারে তাদের অতৃপ্তির কথা বলেছেন।

মানুষ যতই জানছে ভালবাসা নিয়ে মস্তিষ্কের কারসাজি, ততই চিন্তা করছে মস্তিষ্কের এসব কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণকারী ঔষধ আবিষ্কার করতে। এখন তা কল্প বিজ্ঞান মনে হলেও হয়তো ভবিষ্যতে মানুষ ভালবাসার মাত্রাকেও ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবে। বলে রাখা ভাল, কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এধরনের কিছু ঔষধ বাজারে ছেড়েছিল- ঔষধগুলো বাজারে বেশিদিন টিকতে পারেনি।

মস্তিষ্করসায়ন এখনো পুরোপুরি মানুষের বোঝা হয়ে উঠেনি, কোন একটা প্রক্রিয়া যে আরেকটা প্রক্রিয়াকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যাপারটা আসলে এরকম না। বরং মস্তিষ্কের পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকগুলো জটিল প্রক্রিয়ার নেটয়ার্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়- যেখানে কোন একটি প্রক্রিয়ার বিশেষ গুরুত্ব বা ভূমিকা থাকতে পারে।

বিজ্ঞান বলে ভালবাসা সামাজিক, ভালবাসা প্রাচীন, ভালবাসা আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম তৈরি করার গোপন মন্ত্রনা, ভালবাসায় টিকে আছে প্রতিটি প্রাণী, আজো আছি আমরা ভালবাসায়।

সবাইকে আবারো ভালবাসার শুভেচ্ছা রইল....

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা !

ফিলিপাইন ভ্রমন

আমার ভাবনায় বন্ধুত্ব

"জন্মাই আমার আজন্ম পাপ/অভিশাপ"

কর্মজীবীদের চাকরী নিয়ে বিদেশ যেতে করনীয়।

জীবনের জটিলতায় আজ ভবঘুরে আমি !

ধ্রুবতারার প্রেম

মানব মগজ

স্বর্গের মত একটা গ্রাম, রাইন-নরওয়ে

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"