মনের ঝাপসা দর্পন !


ঝাপসা মনের অনুভূতিপাঠ....
হরেক রকম অনূভূতির হরেক রকম প্রকাশ, নানান পুস্তক ঘেটেঘুটে আমার অধম মস্তিষ্কের এই প্রকাশ !

১) “অভূতস্মৃতিবিস্মরণ” - এটা এমন একটা অভিজ্ঞতা যেটা কেউ শুনবে না বা শুনলেও হেসে উড়িয়ে দেবে । আপনি অত্যন্ত অদ্ভুত একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, যেটায় কেউ পড়েনি এর আগে, এর ভয়ংকর অস্বাভাবিকতাটা সম্পর্কে কারো কোন ধারণাই নেই । আপনি এমন কিছু হয়তো শুনেছেন, দেখেছেন যেটা আর কেউ শুনেনি বা দেখেনি । তাই আপনি জগতের কারো সাথে এই অভিজ্ঞতাটা নিয়ে কথা বলে শান্তি পাচ্ছেন না, কেউ সহমর্মী হচ্ছে না আপনার প্রতি । ধীরে ধীরে আপনি নিজে থেকেই আপনার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতাটা ভীষণ কষ্টে ভুলে যেতে শুরু করবেন । এভাবে ভুলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটাই হল "অভূতস্মৃতিবিস্মরণ" ।

২) “জ্যেষ্ঠহরণভীতি” - এটা হচ্ছে খুব প্রিয় কাউকে তার / তাঁর বয়স বাড়ার সাথে হারিয়ে ফেলার ভয় । এটা সবচেয়ে বেশি হয় বাবা/মা এর সাথে ।

৩) “আত্মাস্তভীতি” - এটা হচ্ছে খুব প্রিয় বিমূর্ত কোন কিছুকে নিজের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হারিয়ে ফেলার ভয় । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নিজের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যবোধ, আত্মসম্মানবোধ, চঞ্চলতা, আত্মনির্ভরশীলতা ইত্যাদি বয়স বাড়ার সাথে হারিয়ে ফেলার ভয় ।

৪) “অবলয়বৃত্তকাম” - অবচেতন মনে এমন একটা দুর্যোগ আশা করা যেটার ফলে আপনার চারপাশের সমস্ত কিছু ভেঙ্গে চুড়ে যাবে আর আপনি আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করতে পারবেন । যেসব সমস্যা পাকিয়ে ফেলেছিলেন আগে, তার কোনটারই জট খোলার দরকার পড়বে না আর, সেসব সমস্যার অস্তিত্বই থাকবে না । কিংবা একটা কাজ করতে কিছুতেই পারছিলেন না অবোধ্য কিছু জটিলতার কারণে, সব কিছু ধ্বংস হয়ে আবার নতুনভাবে শুরু হলে কোন সমস্যাই আর থাকবে না ।

৫) “বিয়োগময়তা” – কোন একদিন হঠাৎ একা থাকতে চাওয়া, সামাজিক যোগাযোগ, সমাজ সম্পর্কিত সবকিছু অসহ্য লাগা, একান্ত কাছের বন্ধুটিকেও দূরে ঠেলে দেওয়া । এককথায়, মানুষকে বিরক্ত লাগতে শুরু করা ।

৬) “আত্মম্বরবিলাসিতা” – এ অনুভূতিটা বয়সের একটা পর্যায়ে এসে দারুনভাবে অনুভূত হয় । এ সময় বাবা মায়ের কাছে হাতখরচ চাইতে লজ্জা করে, নিজে কিছু আয় করে তাঁদেরকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আয় করার সময় ও সুযোগ কোনটাই তখনও আসেনি ।

৭) “অনধিকারপরসহভাগ” – এ অনুভূতিটা হল এক ধরণের অপরাধবোধ । আমরা অনেক সময় কারো সাথে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত অনেক কথা বলে ফেলি, পরে যখন সেই ব্যক্তিটি আপনার সাথে কোনভাবে প্রতারণা করে, তার বন্ধুত্ব সহ সবকিছু এক পর্যায়ে অভিনয় বলে প্রমাণিত হয়, মোট কথা, এক সময়ের অনেক কাছের বন্ধুটি, যার সাথে আপনি আপনার জীবনের সব কথা, সব গল্প বলতেন, জগতের যাবতীয় জটিলটায় সে এক সময় অনেক দূরের অপরিচিত কোন মানুষ হয়ে যায়, তখন নিজের বিবেকের কাছে একটা অপরাধবোধ জন্মে, আপনার এত গল্প এত কথা শোনার অধিকার কি তার আদৌ ছিল ? কেন আপনার জীবনের এত গোপন, এত কাছের আর এত আরাধ্য সব তথ্য বলতে গেলেন তাকে? এই অনুভূতিটিই “অনধিকারপরসহভাগ”

৮) “সুড়ঙ্গশুন্যদর্শন” – এ অনুভূতিটা এমন একটা বোধ, যার ফলে মনে হয়, আপনার কখনোই কিছু হবে না । ‘কিছু’ হওয়াটা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিত্বে ভিন্ন ভিন্ন হয় । অনেকের স্বপ্নে থাকে কোন নির্দিষ্ট জীবিকা অর্জনের পথ, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণ, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া ইত্যাদি । কারো কারো ক্ষেত্রে এই স্বপ্নের তীব্রতা এতই বেশি থাকে যে মনে হয় – এটা হওয়া ছাড়া জীবন অচল, এই পদবী অর্জন না করতে পারলে আমার চলবেই না, ওকে ছাড়া আমি বাঁচবোই না ইত্যাদি । এ ধরণের মানুষ এত বেশি আশাবাদী ও স্বাপ্নিক হয়ে থাকে যে এসব স্বপ্নের কোন বিকল্প কখনো সে চিন্তাও করতে পারে না । কখনো যদি এমন অতি স্বাপ্নিক কোন ব্যক্তির এসব স্বপ্নের কোনটাই পূরণ না হয়, তখন অস্বাভাবিক রকমের হতাশা ঘিরে ধরে তাকে । এই হতাশাটার অপর নাম "সুড়ঙ্গশুন্যদর্শন”

৯) “শুন্যময়তা” – এই অনুভূতিটা আগের অনুভূতিটির সাথে মিলে যায় অনেকটা, কিন্তু পার্থক্য হল, “সুড়ঙ্গশুন্যদর্শন” এর ক্ষেত্রে অতি স্বাপ্নিক ব্যক্তিটি যখন হঠাৎ অস্বাভাবিক রকমের হতাশার সম্মুখীন হয়, তখন এই হঠাৎ হতোদ্যম হওয়াটা সামলাতে না পেরে সুইসাইড করে বসে । আর “শুন্যময়তা” এর ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি সুইসাইড করে না । এটি আরও ভয়ংকর । ব্যক্তিটি হঠাৎ আসা বাস্তবতাকে নতুনভাবে নিয়ে শুন্য দৃষ্টিতে নিয়তির পথে হাঁটতে থাকে, হঠাৎ সে বুঝতে পারে, কিছুতেই কিছু হবে না । এ ধরণের মানুষ তখন বিকল্প নিতে শিখে, কিন্তু কোন কিছুতেই স্থির থাকতে পারে না, এক সময়ের অনেক স্বাপ্নিক, উচ্ছ্বল মানুষটা হঠাৎ পরিণত হয়ে যায় অনুভূতিহীন,শক্ত হৃদয়ের, কিন্তু চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা একজন ব্যক্তিত্বে । প্রতি পদে পদে তার সন্দেহ হয়, বার বার সে নিজেকে প্রশ্ন করে, “কি হবে এগিয়ে?”

১০) “শুন্যেবিয়োগাসক্তি” –
কোন প্রিয়জনকে হারিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে মাঝে মাঝে এ অদ্ভুত অনুভূতিটা হয় । কোন প্রিয়জনকে হারালেন । প্রচণ্ড কষ্ট শুরু হল মনে, হয়তো আত্মার ভিতর থেকে । কষ্ট পেতে পেতে ক্লান্ত হয়ে এক পর্যায়ে মনে হয়, এমন যদি হতো, যাকে হারালেন সে যদি কখনোই না থাকতো, তাহলে তো এত কষ্ট পেতে হতো না । কেন সে ছিল? তার অস্তিত্বটা না থাকলে কি এমন হতো? এই অদ্ভুত অনুভূতিটুকুই “শুন্যেবিয়োগাসক্তি”
(Christopher Nolan, Reference)

১১) “বৈরুচি”- অদ্ভুত একটা একাকীত্ববোধ । ধরুন আপনি এমন একটা জায়গায় বা এমন কোন সার্কেলে আছেন যাদের মাঝে থেকে আপনি আপনার অতি প্রিয় কোন গান শুনতে, বই পড়তে বা মুভি দেখতে পারছেন না কিংবা খুব প্রিয় কোন খাওয়া বা খাওয়ার জায়গা নিয়ে আলোচনাও করতে পারছেন না । কারণটা খুবই অদ্ভুত – ঐ জায়গায় হয়তো ঐ ধরণের গান, ঐ ধরণের মুভি বা বই আপনি ছাড়া কেউই পছন্দ করে না, অথবা আপনি পছন্দ করেন জানলে হয় আপনার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকানো হবে কিংবা এমন কিছু কথা বলা হবে যার ফলে আপনি আপনার রুচিবোধ নিয়ে নিজেই অস্বস্তিতে পড়বেন । তাই কাউকে কিছু না বলে বা তোয়াক্কা না করে একা একা সেইসব উপভোগ করতে অভ্যস্ত হওয়াটাই “বৈরুচি”

১২) “তুচ্ছঋদ্ধরিক্ততা” – আপনি একটা রুমে আছেন । আরও অনেকেই আছেন সেখানে । তাঁদের সাথে কথা বলছেন, এক পর্যায়ে আপনি আবিষ্কার করলেন আপনি এ রুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং আপনাকে সবাই পছন্দ করছে । এবং অতি বিচিত্রভাবে ব্যাপারটাতে আপনি অত্যন্ত বিরক্ত হচ্ছেন । এটা অহংকার নয় । বরং আপনার অবচেতন মন বলছে, “এমনটা তো আমি চাইনি, উল্টো আমি চেয়েছিলাম আমার চেয়ে ভালো কেউ থাকুক, আমি বরং ভালো কিছু শিখি তার কাছ থেকে । ” এই অদ্ভুত দুঃখবোধটাই “তুচ্ছঋদ্ধরিক্ততা”

১৩) “বেকণ্ঠত্ব” – একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান (অবশ্যই আপনি তাঁর বা তাঁদের অধীনে) আপনাকে যতই ভোগাক, যতই হেয় করুক, অদ্ভুত একটা বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে তাঁদের মুখের উপর আপনি কিছুই বলতে পারছেন না । কারণ, হয়তো ব্যাপারটা এমন, কারো সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললে লোকেই খোঁটা দেবে, “নিজের ঘরের গীবত নিজে কর কেন?” । সবাই তাঁর বা তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, শুধু তাই নয়, যারা আপনার মতো ভুগেছে তাঁরা পর্যন্ত তোষামোদ করতে গিয়ে ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করছে, মুখ খুলছে না, কিন্তু তোষামোদ করার পক্ষে নন, কাজেই আপনি এ বিষয়ে আপনার পাশে কাউকেই পাচ্ছেন না । এই অসহায়ত্বটাই “বেকণ্ঠত্ব”

১৪) “পীড়িতকৃচ্ছ্রতা” – মনে করুন, আপনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজেকে বাদ দিয়ে বাকি সবার প্রয়োজনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন (থাকে, এমন কিছু লোক থাকে) । ভালো কথা, লোকে আপনাকে ভালো বলে, কোন সাহায্য লাগলেও আপনাকে বলে কারণ, আপনার থেকে সাহায্য আসবেই এটা নিশ্চিত । এমন করতে করতে একটা পর্যায়ে, আপনি দুটো জিনিস খেয়াল করবেন, এক) সবাই আপনাকে অত্যন্ত সস্তা ভাবছে, কিংবা অস্বাভাবিক ভাবছে এবং ভয়ংকর ব্যাপার হল হাসাহাসি শুরু করছে, দুই) সবাই আপনাকে ব্যবহার করা শুরু করছে । এমতাবস্থায় কেউ কেউ আর কাউকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, আবার কেউ কেউ তার সবাইকে-সাহায্য-করা বৈশিষ্ট্যটা পুরোপুরি বদলে ফেলে অত্যন্ত ভয়ংকর ভাবমূর্তি ধারণ করে । এতদিন ধরে বিশ্বাস করে আসা সবাইকে সে সন্দেহ করা শুরু করে, যে কারো যেকোনো কথায় মনে করে তাকে হেয় করা হচ্ছে । সবাই তাকে আরও বেশি অস্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে, তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে । এই জটিল পরিস্থিতিটি হচ্ছে “পীড়িতকৃচ্ছ্রতা”

১৫) “শুন্যযোগ” – এমন একটা বোধোদয় হওয়া, যে আপনি সত্যিকার অর্থে একা নন, আপনার আশেপাশের মানুষের জীবন ঠিক আপনার মতোই অব্যাখ্যায় জটিলটায় ভরপুর, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আপনার আশেপাশে হাঁটতে থাকা মানুষগুলো আপনার মতোই সেই জট খোলার সমাধান নিয়ে নিরন্তর ভেবে যাচ্ছে, ওরাও আপনার মতোই একা একা ভেবে যাবে মৃত্যু পর্যন্ত।

Jr collection..
To write inspired From – Obscure Sorrows

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা !

ফিলিপাইন ভ্রমন

আমার ভাবনায় বন্ধুত্ব

"জন্মাই আমার আজন্ম পাপ/অভিশাপ"

কর্মজীবীদের চাকরী নিয়ে বিদেশ যেতে করনীয়।

জীবনের জটিলতায় আজ ভবঘুরে আমি !

ধ্রুবতারার প্রেম

মানব মগজ

স্বর্গের মত একটা গ্রাম, রাইন-নরওয়ে

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"