আমি বিদেশ আসছি, আপনি কেন আসবেন ?
আদর্শ লিপি বইতে পড়েছিলাম, লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চরে সে ।
আমার এক ফ্রেন্ড পঞ্চম শ্রেণীর পর আর তার সাথে আমার অনেকদিন কোন যোগাযোগ নেই। কয়েক বছর পর হঠাৎ দেখা, এর মাঝে সে অন্য স্কুলে হাইস্কুল পর্যন্ত গেছে। কিন্তু এতে পড়ে কি হবে! স্কুল শেষ করার আগেই সে গাড়ি চড়া শুরু করেছে। আর আমার তখন গাড়ির কথা ভেবেই দিন কাটে। পড়ালেখা করে আরো কয়েক বছর কাটিয়ে দিলেও আমাদের সেই ‘গাড়ি চড়া’ হয়নি। বলছিলাম বন্ধুর কথা।লেখাপড়া না করে বা কম করেও যে গাড়ি চড়া যায় আর বাড়ি হয়, বিয়ে-সন্তান হয়ে ভালো ‘ধনী’ হওয়া যায় সে তার জলন্ত প্রমাণ। (এমন প্রমান অনেক আছে ) কলেজে পড়ার সময়ই দেখেছি তার ব্যবসা বড় হয়েছে। এরপর মাঝে একবার দেখেছিলাম বন্ধুর চেহারা। অতিশয় ব্যস্ত এক ব্যবসায়ী। বন্ধুর এখন অনেক টাকাও আছে বটে।অবস্থা হলো- আমার ‘সফল’ বন্ধুর মতো আমার টাকা নেই। এ রকম বন্ধু আমার আরো অনেক আছে। স্কুল-কলেজের বন্ধুরা এখন অনেকই প্রতিষ্ঠিত এবং তারা একদিকে ‘টাকাওয়ালা’ অথবা ‘ক্ষমতাবান’। দিন রাত বই মুখস্থ করে অনেকে সরকারী কর্মকর্তাও হয়েছে। এতসব না পড়েও অবশ্য অনেকে বড় কর্মকর্তা হয়েছে। আমি বাবার দেয়া হাতখরচ এর টাকায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি। নিজে কখনোই 'খুব ভালো’ ছাত্র ছিলাম না। রেজাল্ট সন্তোষজনক হলেও, তা অনেক বন্ধুর চেয়ে নিচেই ছিলো। যদিও ডিপ্লোমা পাশ করার পর, ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের বন্ধু (শিক্ষকদের কাছে অপাত্র হয়ে থাকা আমার অনেক বন্ধুই) সবার আগে চাকরিতে ঢুকেছে।
বন্ধুদের অনেকে আজ ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মী/নেতা, ব্যাংকার, সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষকও হয়েছে অনেকে। টুকটাক চাকরি-বাকরি বা কাজ করেও, কিছু করি এটা কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্য করাতে পারিনি। ছেলে কিছু একটা করে বলার পর আমার পরিবারকে সম্পূরক প্রশ্ন শুনতেই হয়েছে। ও আচ্ছা, তা চাকরি বাকরি কিছু করার চেষ্টা করে নাকি মানুষের কাছে কি করি তা বলাই যেন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ছোটখাটো চাকরি যে ‘স্বেচ্ছাসেবী’ চাকরি নয়, এটা বুঝানো ছিল আরো মুশকিল।
আমার এক ফ্রেন্ড পঞ্চম শ্রেণীর পর আর তার সাথে আমার অনেকদিন কোন যোগাযোগ নেই। কয়েক বছর পর হঠাৎ দেখা, এর মাঝে সে অন্য স্কুলে হাইস্কুল পর্যন্ত গেছে। কিন্তু এতে পড়ে কি হবে! স্কুল শেষ করার আগেই সে গাড়ি চড়া শুরু করেছে। আর আমার তখন গাড়ির কথা ভেবেই দিন কাটে। পড়ালেখা করে আরো কয়েক বছর কাটিয়ে দিলেও আমাদের সেই ‘গাড়ি চড়া’ হয়নি। বলছিলাম বন্ধুর কথা।লেখাপড়া না করে বা কম করেও যে গাড়ি চড়া যায় আর বাড়ি হয়, বিয়ে-সন্তান হয়ে ভালো ‘ধনী’ হওয়া যায় সে তার জলন্ত প্রমাণ। (এমন প্রমান অনেক আছে ) কলেজে পড়ার সময়ই দেখেছি তার ব্যবসা বড় হয়েছে। এরপর মাঝে একবার দেখেছিলাম বন্ধুর চেহারা। অতিশয় ব্যস্ত এক ব্যবসায়ী। বন্ধুর এখন অনেক টাকাও আছে বটে।অবস্থা হলো- আমার ‘সফল’ বন্ধুর মতো আমার টাকা নেই। এ রকম বন্ধু আমার আরো অনেক আছে। স্কুল-কলেজের বন্ধুরা এখন অনেকই প্রতিষ্ঠিত এবং তারা একদিকে ‘টাকাওয়ালা’ অথবা ‘ক্ষমতাবান’। দিন রাত বই মুখস্থ করে অনেকে সরকারী কর্মকর্তাও হয়েছে। এতসব না পড়েও অবশ্য অনেকে বড় কর্মকর্তা হয়েছে। আমি বাবার দেয়া হাতখরচ এর টাকায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি। নিজে কখনোই 'খুব ভালো’ ছাত্র ছিলাম না। রেজাল্ট সন্তোষজনক হলেও, তা অনেক বন্ধুর চেয়ে নিচেই ছিলো। যদিও ডিপ্লোমা পাশ করার পর, ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের বন্ধু (শিক্ষকদের কাছে অপাত্র হয়ে থাকা আমার অনেক বন্ধুই) সবার আগে চাকরিতে ঢুকেছে।
বন্ধুদের অনেকে আজ ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মী/নেতা, ব্যাংকার, সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষকও হয়েছে অনেকে। টুকটাক চাকরি-বাকরি বা কাজ করেও, কিছু করি এটা কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্য করাতে পারিনি। ছেলে কিছু একটা করে বলার পর আমার পরিবারকে সম্পূরক প্রশ্ন শুনতেই হয়েছে। ও আচ্ছা, তা চাকরি বাকরি কিছু করার চেষ্টা করে নাকি মানুষের কাছে কি করি তা বলাই যেন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ছোটখাটো চাকরি যে ‘স্বেচ্ছাসেবী’ চাকরি নয়, এটা বুঝানো ছিল আরো মুশকিল।
এ অবস্থায় দেশ ছেড়ে বিদেশে আবার পড়তে এসে ব্যাবসা বা চাকরির ভবিষ্যতই বা কি হবে, তা নিয়ে আমার বাবাও চিন্তিত ছিলেন। ছেলের বিদেশ যাত্রায় তার অনীহা ছিল বরাবরই। আমিও চিন্তা করছিলাম, বিদেশ এসে হবে কি! এত ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সরকারি কর্মকর্তা বন্ধুর সাথে নিজের পরিচয় দেয়ার কি থাকলো। দেশে অবশ্য অনেকেরই অনেক ক্ষমতা- বাস্তবে তা যতটাই হোক । আবার ব্যাংকে গেলে আমাদের মতো অভাগাদের জণ্য ঋণ নাই, বিয়ের জন্য কনে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, বাড়ির লোকজন মনে করে চাকরিতে কবে ঢুকবে, আত্মীয় স্বজন বলাবলি করে- ‘এখনো একটা চাকরি নাই, কবে কি করবে? দেশ ছেড়ে বিদেশে আসার আগে এতকিছু না ভাবলেও, প্রতিনিয়ত এসব প্রশ্ন সাথেই লেগে ছিলো। আসার আগে ভেবে দেখলাম- দেশের বাইরে কিছু একটা করাও তো যায়। এটা অনেক কঠিন আর শুনতে কেমন শুনালেও, নিজে যেমন করে গত ২ বছর আগে আমি নিজেকে যেমন দেখেছিলাম চোখের সামনে এখন আমি সে অবস্থানেই আছি। হাস্যকর হলেও সত্য হলো, এখন থেকে আগামী সামনের ৪/৫ বছর কি হবে তার কোনে ধারণা নাই। হতে পারে দেশ থেকে সে সময় পড়ার জন্য, নতুন একটা জায়গায় তাও আবার বিদেশ বলে কথা। ভাষা, সংস্কৃতি, মানুষ, চাল চলন সবই অন্যরকম। কে চায় এতকিছু নতুন করে আবার জানা, বুঝা, শেখার পর নিজের ভবিষ্যত নিয়া চিন্তার কথা।
ঘুরাঘুরির নেশাও আমার বিদেশে আসার একটা বড় কারণ। একই সাথে যদি নানা দেশ ঘুরা যায় আর সাথে অন্য কিছু থাকে সেটা তো ভালোই! আমার অনেক বন্ধুর মতো আমি বড় বড় ব্যাংক কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি বড় কর্মকর্তা হতে পারবোনা বটে। তবে আমি একজন স্বাধীন মানুষ। বাংলাদেশ না হয়ে জায়গাটাই শুধু ভিন্ন। বিদেশে আমার একটা ব্যাবসা আছে এতুটুকুই সম্বল। এটুকুর জন্য নিজেকে সফল মনে করার মতো কিছু হয়নি, এটা আমি জানি। তবে, নিজের জন্য এটা একু সান্ত্বনার বলা তো যায়ই।
দেশের বাইরে এসে নতুন ভাষা, সংস্কৃতির নানা বাধা পেরিয়ে, নিজের আয় নিজে করে, ঊচ্চ শিক্ষা করা এটা ‘একটা কিছু’ করছি তো অন্তত বলা যায়। অবশ্য অনেক শুভাকাঙ্খীরা বলেন, ‘কি করলাম কি থেকে। কত টাকা আয় করলাম?’ উত্তর হচ্ছে- আমি আহা মরি কিছুই করতে পারিনি, অনেকের মতো টাকাওয়ালা হতে পারিনি। হতে পারবো কি না তাও জানি না।’ এসব কথা শুনে আমি ক্লান্ত হই না। তবে, তারা কোন বিষয়টাকে ‘কিছু করা’ মনে করে আমি শুধু সেটাই ভাবি। আমার অনেক বন্ধু, পরিচিতজন প্রায়ই বিদেশ আসার কথা বলেন। আমি তাদের বলি, তারা আসলে কেন আসতে চান বা তাদের চিন্তা কি। বিদেশে আসার পর অনেকের সাথেই কথা বলার সময় পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রেও আমি একই প্রশ্ন করতাম। আমি দেখেছি অনেকের কোনে পরিষ্কার গন্তব্য নেই। বেশিরভাগের ইচ্ছা বা চাওয়া হলো- চাকরি করা, টাকা পয়সা ইনকাম করা। এটা অবশ্য দরকারিও বটে। তবে কে কোন পথ অবলম্বন করে সেটা করবে সেটাই প্রশ্ন। বিদেশে আমার অনেক পরিচিত বন্ধুই বেশ ভালো টাকা আয় করেন। তাদের ব্যাংকে টাকা আছে আবার দেশে নতুন বাড়িঘরও হয়েছে। কিন্তু নিজের অবস্থা বলার মতো তেমন কিছুই হয়নি। তার মানে এই না যে, আমি ব্যাবসা করি মানে খুব বড় কিছু হয়ে গেছি। কথা হলো- এখানকার সামাজিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আমাদের নিজেদের অবস্থান কি! টাকা পয়সা আমাদের দেশের অনেক ভিক্ষুকের ও আছে। আর যদি আমাদের মতো শিক্ষিত তরুণদের না থাকে তা হলে এ বার্থতা কার ?
অনেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেন। আমার অনেক বন্ধু, যারা বিদেশ এসে কিছু করতে চায় তাদেরকে নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে শুধু এটুকু বলতে চাই- লক্ষ্য একটু পরিষ্কার থাকা জরুরি। নিজে যদি বড় করে স্বপ্ন না দেখা যায়, তাহলে পথ আগে থেকেই ছোট হয়ে যায়। স্বপ্নটা বড় হলে ছুটতে ছুটতে বড় কোনে গন্তব্যে নিশ্চয়ই যাওয়া যায়।এখন প্রশ্ন হতে পারে ছোটার দরকারটাই বা কি! আসলেই! যদি কোন কোন দেশে রাস্তায় হকারের মতো ঘুরে ঘুরেই লাখ টাকা আয় করা যায় আর কি লাগে। পিজা, রেস্টুরেন্টে দিন রাত কাজ করে অনেক টাকা আয় করে বাড়ি ঘর করা গেলে আর কি দরকার! আমিও তাই বলি। ব্যক্তিগত পছন্দ বা ভালোলাগা অবশ্যই যার যার নিজের বিষয়। আপনি কোন দেশে যাবেন কি করবেন এতা একান্তই আপনার নিজের বিষয়। কিন্তু যখন আপনি নিজে সামাজিক অবস্থান নিয়ে ভাববেন, কেন আপনাকে অন্যদের তুলনায় সমানভাবে দেখা হবে না, কেন আপনি বিদেশে স্থানীয় লোকদের কাছে ‘অপাত্র’ বা দৃশ্য বা অদৃশ্য ‘অচ্ছুত’ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করবেন। সহজে কিছু পেতেও চাইবেন আবার সে জন্য কিছু করার জন্য মন চাইবে না- এমন যে কেউ হোক, তার জন্য কি কেউ করুণার পাত্র নিয়ে বসেই থাকতে হবে?
বাংলাদেশে যদি অন্য কোনে দেশের লোক গিয়ে এমন একই অবস্থায় থাকতে চাইতো, টাকা আয় করে দেশে পাঠাতো, হোটেল-রেস্তোরায় কাজ করতো, ঠেলাগাড়ি ঠেলতো বা পরিষ্কারের কাজ করে জীবন চালাতো, আপনি তাকে কিভাবে বিবেচনা করতেন! তাকে কি সালাম দিতেন বা বলতেন, কেমন আছেন। নাকি বলতেন, দেশে মানুষের কাজ নাই, ওরা কাজ পায় কেমনে! তারা এত টাকা কিভাবে পায়। এদের ভালোভাবে থাকার দরকার কি! আমাদের যে চিন্তাভাবনা এগুলা আমরা করতাম, অন্য দেশের লোকজনের সাথে তা আমরা করিও।পত্র পত্রিকায় নানা সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত আফ্রিকা বা অন্য দেশের লোকদের সাথে আচরণের খবর পড়ে এগুলোর বাস্তবতা দেখা যায়। এখন অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের নিজেদের মতো খারাপ না হলেও, অন্য দেশের সামাজিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় চিন্তাগুলো একইরকম। এজন্য দরকার যা তা হলো যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের অবস্থান তুলে ধরতে নিজেই কাজ করা। আমার চেয়ে অনেক ভালো, বড় অভিজ্ঞতা আরো অনেকেরই আছে। তাদের তুলনায় আমার এই অবস্থা খুবই নগন্য। সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
ঘুরাঘুরির নেশাও আমার বিদেশে আসার একটা বড় কারণ। একই সাথে যদি নানা দেশ ঘুরা যায় আর সাথে অন্য কিছু থাকে সেটা তো ভালোই! আমার অনেক বন্ধুর মতো আমি বড় বড় ব্যাংক কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি বড় কর্মকর্তা হতে পারবোনা বটে। তবে আমি একজন স্বাধীন মানুষ। বাংলাদেশ না হয়ে জায়গাটাই শুধু ভিন্ন। বিদেশে আমার একটা ব্যাবসা আছে এতুটুকুই সম্বল। এটুকুর জন্য নিজেকে সফল মনে করার মতো কিছু হয়নি, এটা আমি জানি। তবে, নিজের জন্য এটা একু সান্ত্বনার বলা তো যায়ই।
দেশের বাইরে এসে নতুন ভাষা, সংস্কৃতির নানা বাধা পেরিয়ে, নিজের আয় নিজে করে, ঊচ্চ শিক্ষা করা এটা ‘একটা কিছু’ করছি তো অন্তত বলা যায়। অবশ্য অনেক শুভাকাঙ্খীরা বলেন, ‘কি করলাম কি থেকে। কত টাকা আয় করলাম?’ উত্তর হচ্ছে- আমি আহা মরি কিছুই করতে পারিনি, অনেকের মতো টাকাওয়ালা হতে পারিনি। হতে পারবো কি না তাও জানি না।’ এসব কথা শুনে আমি ক্লান্ত হই না। তবে, তারা কোন বিষয়টাকে ‘কিছু করা’ মনে করে আমি শুধু সেটাই ভাবি। আমার অনেক বন্ধু, পরিচিতজন প্রায়ই বিদেশ আসার কথা বলেন। আমি তাদের বলি, তারা আসলে কেন আসতে চান বা তাদের চিন্তা কি। বিদেশে আসার পর অনেকের সাথেই কথা বলার সময় পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রেও আমি একই প্রশ্ন করতাম। আমি দেখেছি অনেকের কোনে পরিষ্কার গন্তব্য নেই। বেশিরভাগের ইচ্ছা বা চাওয়া হলো- চাকরি করা, টাকা পয়সা ইনকাম করা। এটা অবশ্য দরকারিও বটে। তবে কে কোন পথ অবলম্বন করে সেটা করবে সেটাই প্রশ্ন। বিদেশে আমার অনেক পরিচিত বন্ধুই বেশ ভালো টাকা আয় করেন। তাদের ব্যাংকে টাকা আছে আবার দেশে নতুন বাড়িঘরও হয়েছে। কিন্তু নিজের অবস্থা বলার মতো তেমন কিছুই হয়নি। তার মানে এই না যে, আমি ব্যাবসা করি মানে খুব বড় কিছু হয়ে গেছি। কথা হলো- এখানকার সামাজিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আমাদের নিজেদের অবস্থান কি! টাকা পয়সা আমাদের দেশের অনেক ভিক্ষুকের ও আছে। আর যদি আমাদের মতো শিক্ষিত তরুণদের না থাকে তা হলে এ বার্থতা কার ?
অনেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেন। আমার অনেক বন্ধু, যারা বিদেশ এসে কিছু করতে চায় তাদেরকে নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে শুধু এটুকু বলতে চাই- লক্ষ্য একটু পরিষ্কার থাকা জরুরি। নিজে যদি বড় করে স্বপ্ন না দেখা যায়, তাহলে পথ আগে থেকেই ছোট হয়ে যায়। স্বপ্নটা বড় হলে ছুটতে ছুটতে বড় কোনে গন্তব্যে নিশ্চয়ই যাওয়া যায়।এখন প্রশ্ন হতে পারে ছোটার দরকারটাই বা কি! আসলেই! যদি কোন কোন দেশে রাস্তায় হকারের মতো ঘুরে ঘুরেই লাখ টাকা আয় করা যায় আর কি লাগে। পিজা, রেস্টুরেন্টে দিন রাত কাজ করে অনেক টাকা আয় করে বাড়ি ঘর করা গেলে আর কি দরকার! আমিও তাই বলি। ব্যক্তিগত পছন্দ বা ভালোলাগা অবশ্যই যার যার নিজের বিষয়। আপনি কোন দেশে যাবেন কি করবেন এতা একান্তই আপনার নিজের বিষয়। কিন্তু যখন আপনি নিজে সামাজিক অবস্থান নিয়ে ভাববেন, কেন আপনাকে অন্যদের তুলনায় সমানভাবে দেখা হবে না, কেন আপনি বিদেশে স্থানীয় লোকদের কাছে ‘অপাত্র’ বা দৃশ্য বা অদৃশ্য ‘অচ্ছুত’ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করবেন। সহজে কিছু পেতেও চাইবেন আবার সে জন্য কিছু করার জন্য মন চাইবে না- এমন যে কেউ হোক, তার জন্য কি কেউ করুণার পাত্র নিয়ে বসেই থাকতে হবে?
বাংলাদেশে যদি অন্য কোনে দেশের লোক গিয়ে এমন একই অবস্থায় থাকতে চাইতো, টাকা আয় করে দেশে পাঠাতো, হোটেল-রেস্তোরায় কাজ করতো, ঠেলাগাড়ি ঠেলতো বা পরিষ্কারের কাজ করে জীবন চালাতো, আপনি তাকে কিভাবে বিবেচনা করতেন! তাকে কি সালাম দিতেন বা বলতেন, কেমন আছেন। নাকি বলতেন, দেশে মানুষের কাজ নাই, ওরা কাজ পায় কেমনে! তারা এত টাকা কিভাবে পায়। এদের ভালোভাবে থাকার দরকার কি! আমাদের যে চিন্তাভাবনা এগুলা আমরা করতাম, অন্য দেশের লোকজনের সাথে তা আমরা করিও।পত্র পত্রিকায় নানা সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত আফ্রিকা বা অন্য দেশের লোকদের সাথে আচরণের খবর পড়ে এগুলোর বাস্তবতা দেখা যায়। এখন অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের নিজেদের মতো খারাপ না হলেও, অন্য দেশের সামাজিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থায় চিন্তাগুলো একইরকম। এজন্য দরকার যা তা হলো যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের অবস্থান তুলে ধরতে নিজেই কাজ করা। আমার চেয়ে অনেক ভালো, বড় অভিজ্ঞতা আরো অনেকেরই আছে। তাদের তুলনায় আমার এই অবস্থা খুবই নগন্য। সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন